খোয়াবনামা

খোয়াবনামা

তবিবুল্লা স্বপ্ন দেখছে, সে আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে আছে। তার বিচার চলছে। নানান মানুষ তার বিরুদ্ধে নানান রকমের অভিযোগ নিয়ে আসছে। হুদাই ভুংভাং বুঝ দিয়ে তাকে কারাগারে পাঠানোর ব্যবস্থা করতে চাচ্ছে।

কিন্তু হাকিম তো সব বুঝেন। গোয়েন্দা রিপোর্ট তার হাতে, পুরা ক্লিনশীট। কোনরকমের বগিচগিতে জড়ানো নাই তার নাম। বিচারক এসব ভুয়া দাবীনামাকে গুরত্ব না দিয়ে তাকে বললেন, ‘শোন হে, তোমার রেজাল্ট তো ভালো, স্ট্যান্ড করছিলা নাকি? জিপিএ সিস্টেমের আগের মানুষ না তুমি? পেপারে ছবি আসছিল না? তোমার কিছু হবে না, নো টেনশন; বলো তোমাকে কিভাবে সাহায্য করতে পারি…’

তবিবুল্লা বলল, ‘আমার তো এখন মাদাগাস্কার, পেরু আর মরক্কোর ট্যুরিস্ট ভিসা দরকার। এই দেশগুলোতে যাওয়া হয় নাই। আপনি যদি ভাল করে একটা রেফারেন্স লেটার দিয়ে দেন তাইলে ক্লিয়ারেন্স আর ভিসা পাইতে সুবিধা হবে। প্লিজ, এই উপকারটা করেন…’

‘তথাস্তু’…

স্বপ্নের স্থায়িত্ব যেহেতু ৩ সেকেন্ড, তাই যা দেখবার বা করবার তা এর মধ্যেই দেখে ফেলা লাগে৷ তাই সময় নষ্ট না করে একে একে এসব দেশের অ্যাম্বাসিতে চলে গেল সে। মাদাগাস্কারেরটা খুজে পাইতে একটু সময় লাগলো। কিন্তু, আপনারা জানেন, স্বপ্নে ক্যাটরিনা কাইফকেও পাওয়া সম্ভব।

পাসপোর্ট দেয়া মাত্রই অ্যাম্বাসির লোকেরা ভিসায় ইনভেস্টর স্টিকার লাগিয়ে দিলো। টাকাপয়সার কথা জিগাইতেই তারা বললো, ‘টাকা লাগবেনা। আপনি উপরের লেভেল থেকে আসছেন। আপনার থেকে টাকা নিবো কেন?’

তারপরের দৃশ্যেই সে দেখতে পেল, টিকিট ছাড়াই সে পেরুগামী ফ্লাইটে উঠে পড়েছে। বিমানের ফ্লাইট। বিমানবালারা সব বিমানখালা লেভেলের৷ দাড়িওয়ালা ফ্লাইটস্টুয়ার্ড খাবার সার্ভ না করে তার সিটে বসে ঢুলছে বেশিরভাগ সময়৷

কানেক্টিং ফ্লাইট টার্কি এয়ারপোর্ট থেকে ফ্লাই করার পরে একদল টেরোরিস্ট প্লেনটাকে হাইজ্যাক করে পেরু না গিয়ে সেন্ট্রাল আমেরিকান কলাম্বিয়ায় নিয়ে গেল। ‘হিপস ডোন্ট লাই’ এর শাকিরার দেশে।

সেখানে ল্যান্ড করামাত্রই পাবলো এসকোবারের গুন্ডাবাহিনীর সাথে টেরোরিস্টদের সামনাসামনি গন্ডগোল। নেটফ্লিক্সের ওয়েবসিরিজ ‘নাচোস’ তাদের ধুন্ধুমার কান্ডকারখানা অনেক দেখেছে সে। ড্রাগলর্ডের অনুসারীরা টেরোরিস্টদের দিকে এলএমজি তাক করে ‘la muy puta!’ বলে উচ্চস্বরে গালি দিচ্ছে…..তবিবুল্লা এর অর্থ জানে, এটা খুব খারাপ গালি।

সে বড়ই শরমিন্দা বোধ করল।

এতসব অব্যবস্থাপনা দেখে ঘুমের মধ্যেই তবিবুল্লার মেজাজ বিগড়ে গেছে। এর বিহিত কিভাবে করা যায় ভাবছে।

কিন্তু তার গডফাদার হাকিমের সাথে যোগাযোগের আর কোনো সুযোগ পাচ্ছে না…কারণ তার মোবাইলে ইন্টারন্যাশনাল রোমিং করা নাই। দেশের বাইরে গেলে ওয়াইফাই-ই ভরসা। বিমানের প্লেন, তাই নেট কানেকশনও নাই। এরপরে কোথাও গেলে এমিরেটস অথবা কাতার এয়ারওয়েজের ফ্লাইটে যাবে বলে সে স্থির করল। ওইখানে ইনফ্লাইট মেগাবাইট কেনার সিস্টেম আছে।

স্বপ্নের মাঝেও এত বিড়ম্বনার স্বীকার হচ্ছে দেখে তার খুবই দুঃখবোধ হইল।

তবিবুল্লা আসলে বুঝতে পারছে না… স্বপ্নটা আসলে ইবলিশ শয়তান দেখাচ্ছে তাকে। পুরাটাই শয়তানের ওয়াসওয়াসা।

আর এরকম স্বপ্ন সাধারণত শয়তানেই দেখায়।

ভোর রাতে !

Your Comment