ছোয়াচে ভালবাসা

valobasha

“দুই তিনদিন কালবৈশাখীর বৃষ্টিতে ভিজে ডিউটি করতে করতে মাজহারের নাকি জ্বর আসছে, জামাকাপড় নষ্ট হয়ে গেছে। মাজহার আমাদের বাসার দারোয়ান। সে এখন নতুন জামা কিনতে চায়। সন্ধ্যার দিকে আব্বার কাছে এসে বলতেছে, ‘খালুজান, ভাইয়ারে টাকা দিতে বলেন। ডাক্তারের কাছে যাইতে হবে, খুব কাশি আসতাছে, সাথে জ্বর। আর পানিতে ভিজ্জা পরনের জামা ছিঁড়া তেনাতেনা হইছে, ক্লিনিক থেইকা শপিংয়ে যাবো’

চাকরটার মুখে ‘শপিং’ শব্দটা শুনে আমার হাসি পাইলো। ছোটলোকদের মুখে শপিং শব্দটা মানায় না। ছোটলোকরা বলবে মার্কেটে যাবো, মার্কেটিং করবো। ছোটলোকদের আবার কিসের শপিং…

আমি যে কখন ওর পিছনে এসে দাঁড়িয়েছি সে খেয়াল করে নাই। কথা শেষ হওয়ামাত্র আমি ওর পিঠের ঠিক নিচে একটা লাথি মারলাম। লাথি খেয়ে হারামজাদাটা উপুত হয়ে মেঝেতে পড়ে গেল। খালি গায়ে থাকায় ব্যাটার পিঠে একজিমা দেখতে পেলাম। সাদা হয়ে আছে পাচড়াওয়ালা জায়গাটা। লাথি মারার সময়ে আমার পায়ে জুতা ছিল। নাইলে জীবাণু আমার গায়ে লাগত। এইসব ছোটলোকের বাচ্চারা কই কই সব অজায়গা কুজায়গায় যে যায়। মাজহারের বাড়ি ছিল মানিকগঞ্জ, যথারীতি অনেক জমিজায়দাদ ছিল তার বাপদাদার এই গল্প দেয় সে। নদীভাংগনের কারণে নাকি সর্বস্ব হারিয়ে এখন মানুষের বাসায় চাকরগিরি করে। লাথি খাওয়ার ধকল সামলে উঠলে পরে ওকে বুকে ধাক্কা দিয়ে সিড়ি থেকে নামাতে নামাতে বললাম, “ভাগ শূয়ারের বাচ্চা, তোর জ্বর টা সিজনাল। যা পাশের বাসার লেবুগাছ থেকে দুইটা লেবু চুরি করে নিয়ে আয় আর গরম পানিতে মিশায়ে খা।” এর আগে ওকে মেয়াদোত্তীর্ণ দেখে দুইটা প্যারাসিটামল ট্যাবলেট হাতে ধরায়ে দিছি। ওষূধ হাতে পেয়ে হারামিটার কুকুরের মত জুলজুল চোখে কৃতজ্ঞতা দেখতে পাইলাম।

মাজহার জানোয়ারটার সাথে মনে হয় কাজের বুয়া তাসলিমার ভাব হয়েছে সম্প্রতি। দিনকয়েক আগে দেশে যাবে বলে মাজহার ছুটি নিয়েছিল। একদিন ফোন দিয়েছি, তখন শালা বলে যে ফেরিতে আছে। ওর তো নদী পার হওয়ার দরকার হয় না। তার মানে সে হয়তো গোয়ালন্দ গিয়েছিল। ওর একজিমা হবে না তো কি! এখন ভাবতেছি, তাসলিমার বাড়িও তো রাজবাড়ি জেলায়। স্বামী পরিত্যক্তা, কুতসিত চেহারা। আমি শূয়ারটাকে মারছি দেখে সে তার নোংরা শাড়ির আঁচলের কোণা দিয়ে মুখ ঢেকে ফোঁপাতে শুরু করেছে। তার মানে এই মাতারির কাছেই মাজহার গিয়েছিল। দুইয়ে দুইয়ে চার মেলালাম। এই বেটি তাইলে বাসা থেকে একজিমার মলমটা চুরি করে নিয়ে গেছে। এখন আমার কাছে পুরা বিষয়টা ক্লিয়ার হয়ে গেলো।

ভাগ্যিস মাজহারকে খালি পায়ে লাথি দেই নাই! কত মানুষ তো ভালবাসার মানুষের সাথে ঘনিষ্ঠ হওয়ার আগে কল্পনাও করতে পারেনা, তার প্রিয় মানুষটির এরকম দুষ্টূ অসুখ রয়েছে…

আসলে আল্লাহ যা করেন, ভালোর জন্যই করেন…”

©

Your Comment